কেন করবেন রুটিন সাস্থ্য পরীক্ষা

কোনো উপসর্গ নেই। শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু শরীরে হয়তো বাসা বেঁধে আছে কোনো জটিল রোগ। এমনটা বেশি ঘটে অসংক্রামক ব্যাধির বেলায়। বেশির ভাগ সংক্রামক ব্যাধি জ্বর, ব্যথা ইত্যাদি নিয়ে হাজির হয়। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার অনেক সময়ই নীরব থাকে। জটিলতর হয়ে পড়ার পরই ধরা পড়ে। যখন ধরা পড়ে তখন বেশ দেরি হয়ে যায়। এ কারণেই বিশ্বজুড়ে রুটিন স্ক্রিনিং পরীক্ষা-নিরীক্ষার গুরুত্ব বেড়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে অনেক উন্নত দেশে কিছু স্ক্রিনিং পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় নিজেদেরই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

চল্লিশ পেরোলেই সাবধান: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য—এসব নীরব ঘাতক। উচ্চ রক্তচাপ হলেই যে মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা হবে, কিংবা ডায়াবেটিস হলে পিপাসা বা প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়বে, তা নয়। ৫০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে এসব রোগ কোনো উপসর্গ তৈরি করে না, রুটিন পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তাই মাঝেমধ্যে রক্তচাপ মাপা ভালো। বছরে বা দুই বছরে অন্তত একবার রক্তের শর্করা ও চর্বি পরীক্ষা করুন। পারিবারিক ইতিহাস, ওজনাধিক্য থাকলে প্রতিবছরই করা ভালো। যেকোনো সময় রক্তের শর্করা ৬ মিলিমোলের বেশি পাওয়া গেলে সঠিক নিয়মে ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা উচিত। রক্তের হিমোগ্লোবিন ডেসিলিটারে ১০ মিলিগ্রামের কম থাকলে এই রক্তশূন্যতার কারণ খোঁজা জরুরি। যেকোনো গোপন রক্তক্ষরণ, যেমন: পেপটিক আলসার, পরিপাকতন্ত্রে কোনো ক্ষত, ক্যানসার কেবল অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা নিয়েই প্রকাশ পায়। মেয়েদের জরায়ুর টিউমার, ক্ষত বা কোনো সমস্যা থাকতে পারে। হতে পারে অপুষ্টি, কিডনি সমস্যা বা কৃমি। রক্তের ইএসআর ১০০-এর বেশি হলে যক্ষ্মা, বাতজাতীয় রোগ, ক্যানসার আছে কিনা খুঁজতে হয়। চল্লিশের পর এসব পরীক্ষার সঙ্গে ইসিজি, বুকের এক্স-রে করা উচিত।

কিডনি, যকৃৎ ভালো আছে তো?: অনেকেই সুস্থ অবস্থায়ও জানতে চান—কিডনি, লিভার ঠিকঠাক আছে তো? জানাটা বোকামি নয়, না-জানাটাই বোকামি। সাধারণভাবে যকৃতের কার্যকারিতা বোঝা যায় রক্তে এসজিপিটি দেখে। প্রায়ই অনেকের বেশি থাকে, কারণটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার বা যকৃতের কোনো গোপন সংক্রমণ। এসজিপিটি স্বাভাবিকের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি হলে অবশ্যই সজাগ হতে হবে। একটি পেটের আলট্রাসনোগ্রাম বলে দেবে যকৃতে চর্বি জমেছে নাকি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ, সিরোসিস ইত্যাদি হয়েছে। কিডনির কার্যকারিতা দেখার জন্য রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা হয়। নীরব ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, প্রোস্টেটের সমস্যা ইত্যাদিতে ক্রিয়েটিনিন বেশি আসতেও পারে। রুটিন আলট্রাসনোগ্রাফিতে প্রায়ই চুপচাপ বসে থাকা পিত্তথলি বা কিডনির পাথর, ফোলা কিডনি, বৃহৎ প্রোস্টেট, জরায়ুর টিউমার বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট ইত্যাদি ধরা পড়ে।

নারীদের চাই বিশেষ কিছু: ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের এর বাইরে বছরে একবার স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম বা তিন বছরে একবার ম্যামোগ্রাফি করা উচিত। ঝুঁকি থাকলে (যেমন: পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস) আরও সচেতন হবেন। জরায়ুমুখের ক্যানসার কেবল রুটিন প্যাপস স্মিয়ার টেস্টেই ধরা পড়ে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। নিজের পেছনে কিছু অর্থ ব্যয় করুন। আজকাল অনেক বেসরকারি হাসপাতালে বয়স অনুযায়ী প্যাকেজ রুটিন পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। তা না হলে পরিচিত কোনো চিকিৎসকের কাছ থেকে দরকারি পরীক্ষাগুলো লিখিয়ে নিতে পারেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফাইল যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করুন কেননা পরবর্তী ফলাফলের সঙ্গে মেলানোর দরকার হতে পারে। 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *